চাষ করুন থাই পেয়ারার, ফলন মিলবে গাছ প্রতি ৬০ থেকে ৭০ কেজি

পেয়ারার মৌসুম বলা হয় বর্ষা কালকে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সারা বছরই পেয়ারার আবার হয়।

পেয়ারাকে পছন্দ করে না এমন কাওকে খুঁজে বের করা যাবে না। এর সুন্দর রঙ, সুমিষ্ট গন্ধ, কচকচে স্বাদ ও মিষ্টির কারণে ছোট থেকে বড় সবারই ভীষণ পছন্দের ফল।

শুধুমাত্র স্বাদেই অতুলনীয় তা কিন্তু নয় এর অনেক গুণও রয়েছে। পেয়ারাতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ এতই যে একে ভিটামিন সি এর ব্যাংক বলা হয়। আমাদের দেশের ভীষণ জনপ্রিয় একটি ফল।

এর বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava। বাংলাদেশের সর্বত্র পেয়ারা উৎপাদন করা হয়। তবে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উল্লেখযোগ্য।

শক্তি উপাদান




প্রতি ১০০ গ্রামে শক্তির পরিমাণ
জলীয় অংশ ৮১.৭ গ্রাম
শর্করা ১১.২ গ্রাম

হজমযোগ্য আঁশ ৫.২ গ্রাম
আমিষ ০.৯ গ্রাম
খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম

চর্বি ০.২ গ্রাম
ভিটামিন সি ২১০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ১ ০.২১ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি ২ ০.০৯ মিলিগ্রাম
ক্যারোটিন ১০০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম

আয়রন ১.৪ মিলিগ্রাম
খাদ্যশক্তি ৫১ কিলোক্যালরি

স্বাস্থ্যগুণঃ পেয়ারা খুবই সাধারণ ও সহজলভ্য একটি ফল যার গুণের কোনো শেষ নেই। বহুবিধ গুণের জন্যে পেয়ারাকে মিসরীয় অঞ্চলের আপেল বলা হয়।

হৃদরোগ প্রতিরোধেঃ পেয়ারা শরীরের পটাসিয়াম এবং সোডিয়াম এর ভারসাম্য বজায় রেখে হৃদরোগের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা করে। বিশেষ করে লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি রঙের পেয়ারা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করেঃ পেয়ারা একটি উচ্চ ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ উৎস যা আপনার চোখের স্বাস্থ্যকে উন্নতি করে এবং আপনার দৃষ্টিভঙ্গির অবনতি প্রতিরোধ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ পেয়ারাতে কোয়ারসেটিন, লাইকোপিন, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য বহু পলিফেনল রয়েছে যা ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাধা প্রদান করে। মূলত ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

পরিপাকে সাহায্য করেঃ পেয়ারায় ১২% ফাইবার রয়েছে যা পরিপাক্তন্ত্রের কাজে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য তালিকার মধ্যে পেয়ারা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং কম গ্লাইসেমিক সূচক যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। পেয়ারা পাতাও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। কচি পেয়ারা পাতা শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে ১ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে তারপর ছেঁকে নিয়ে পান করতে পারেন প্রতিদিন।

ত্বকের যত্নেঃ এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইকোবালীয় বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের সংক্রমণ এবং ত্বকের বয়সের ছাপ পরতে বাধা দেয়।




রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ পেয়ারা একটি উচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল।একটি পেয়ারাতে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে একটা মাঝারি আকৃতির কমলা থেকে যা আপনার অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি অ্যান্টিবডি উত্পাদন করে যা বাইরের কোনো সংক্রমণ রোগের সাথে যুদ্ধ করে শরীরকে প্রতিরক্ষা করে।

ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতেঃ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে পেয়ারা। উচ্চ পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকায় এটি শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়। তবে কাঁচা পেয়ারা ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে কার্যকর।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

মাসিকের ব্যাথা নিরাময়ঃ অনেক নারীরই মাসিককালিন পেট ব্যাথা হয়। ফলে এ সময় অনেকেই ব্যাথারঔষধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এ সময় পেয়ারার পাতা চিবিয়ে বা রস খেলে মাসিককালিন পেট ব্যাথা থেকে দ্রুত উপসম পাওয়া যায়।

পেটের অসুখ নিরাময়ঃ কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের অসুখ নিরাময়ে পেয়ারার পাতা ও ছাল ভালো কাজ করে।

ক্ষত বা ঘাঁঃ ক্ষত বা ঘাঁয়ে পাতা থেতলিয়ে প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।

দাঁত ব্যাথা নিরাময়ঃ পেয়ারার কচি পাতা চিবালে দাঁতের ব্যাথা উপশম হয়।

ব্যবহারঃ মূলত টাটকা ফল হিসেবে খাওয়া হয়। বিভিন্ন ডেজার্ট, শরবত, কেক, ফ্রুট সালাদ হিসেবে গোটা ফল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পেয়ারা থেকে জ্যাম, জেলী, জুস তৈরী করা হয়।

জাতঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, গাজীপুর উদ্ভাবিত ফলগুলো হল কাজী পেয়ারা, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩, বারি পেয়ারা-৪। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে উদ্ভাবিত ফলগুলো হলঃ বাউ পেয়ারা-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ,৭, ৮, ৯। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত ফল হল ইপসাপেয়ারা। এসব উদ্ভাবিত জাতের পাশাপাশি পেয়ারার অন্যান্য জনপ্রিয় জাতগুলো হল: কাঞ্চননগর, মুকুন্দপুরী ও স্বরূপকাঠি।

কাজী পেয়ারাঃ উচ্চফলনশীল জাত, ফল সামান্য টক ও বীজ বেশ শক্ত। এর ওজন প্রায় ৪০০-৫০০ গ্রাম।

বারি পেয়ারা-২ঃ উচ্চ ফলনশীল জাত। সর্বত্র এর চাষ করা যায়। জাতটি থেকে বর্ষাকালে ও শীতকালে ২ বার ফল পাওয়া যায়। এর ওজন প্রায় ৩৫০-৪০০ গ্রাম।

বারি পেয়ারা -৩ঃ ফলের গাত্র মসৃণ, পূর্ণ পরিপক্ক অবস্থায় হলদে সবুজ, লাল শাঁসযুক্ত, বীজ মধ্যম। এর ওজন প্রায় ১৮০ গ্রাম।

বারি পেয়ারা-৪ঃ বীজহীন, কচকচে ও খেতে অনেক মিষ্টি। এই জাতের পেয়ারায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব কম থাকে। এর ওজন প্রায় ২৮৪ গ্রাম।

উপযুক্ত সময়ঃ পেয়ারা বারমাসি ফল। তাই বছরের যেকোন সময়েই পেয়ারা রোপণ করা যায়। তবে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পেয়ারার ফলন পাওয়া সম্ভব। বর্ষাকালে পেয়ারার ফলন বেশি হয় ফলে পেয়ারার দাম অনেক কম থাকে অন্যান্য সময়ের তুলনায়। থাই পেয়ার চাষের জন্যে অন্যান্য জাতের পেয়ারার মতোই মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে এর চারা রোপণ করতে হয়।

চাষ পদ্ধতিঃ আপনি বাসায় যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো আছে এমন জায়গায় একটি মাঝারি সাইজের পাত্রের মধ্যে পেয়ারা গাছ লাগাতে পারেন। এই গাছের জন্য ভালোভাবে পানি নিষ্কাশন সম্পন্ন মাটির প্রয়োজন, তবে এটি বিভিন্ন ধরণের মাটিতেও জন্মে। টবে বা পাত্রে পেয়ারা গাছ রোপণের সময় বাগানের মাটি অবশ্যই বালি এবং ভাল কম্পোস্ট মিশ্রিত হতে হবে।

মাটি তৈরিঃ থাই পেয়ারা চাষের জন্য নিষ্কাশন সুবিধা সম্পন্ন বেলে দোআঁশ মাটিই উত্তম। থাই পেয়ারা গাছ লাগাতে ২ ভাগ মাটির সাথে ১ ভাগ গোবর সার ও ৪০-৫০ গ্রাম টি. এস.পি, ৪০-৫০ গ্রাম পটাশ সার মিশিয়ে পাত্রে রেখে দিয়ে পানিতে ভিজিয়ে ১০-১২ দিনের জন্য রেখে দিতে হবে। এরপর মাটি খুচিয়ে তা আবার ৫-৬ দিনের জন্য রেখে দিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে হলে তখন বীজ বা চারা রোপণ করতে হবে।

পেয়ারা গাছ রোপণ পদ্ধতি

বীজ থেকেঃ আপনি যদি বীজ দ্বারা রোপণ করতে চান তবে এই গাছ থেকে ফল দিতে প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর সময় লাগবে।

বীজ লাগানোর জন্য প্রথমে নার্সারি দোকান থেকে ভাল মানের বীজ কিনুন। বীজ রোপণ করার আগে ৩ থেকে ৫ দিনের জন্য পানিতে ভিজিয়ে নিন। ফলে বীজ অঙ্কুরিত হবে।

এরপর ছোট একটি পাত্রে সার মিশ্রিত মাটি নিয়ে ছোট ছোট গর্ত করে বীজ বপন করুন। আর্দ্রতা বজায় রাখতে হালকা করে পানি ছিটিয়ে দিন।

এখন প্লাস্টিকের শীট দিয়ে ঢেকে দিন। পরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখুন। পেয়ারা বীজের তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাল হয়।

প্রায় ৩ থেকে ১০ সপ্তাহ পরে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হবে। গাছপালা যথেষ্ট পরিপক্ক হলে অন্য কোনো বড় পাত্রে স্থানান্তরিত করতে হবে। আপনি যদি চান তবে আপনি সরাসরি নার্সারি থেকে গ্রাফটিং গাছ কিনতে পারবেন।

থাই 7 পেয়ারা চাষ পদ্ধতি পেয়ারা চাষে সাফল্য পেয়ারা চারা রোপন পদ্ধতি পেয়ারা চাষে লাভ থাই পেয়ারা ৭ চাষ পদ্ধতি হাইব্রিড পেয়ারা চাষ থাই পেয়ারা চারা কোথায় পাওয়া যায় থাই পেয়ারা পেয়ারা চাষে সাফল্য টবে পেয়ারা চাষ থাই পেয়ারা গাছের যত্নপেয়ারা ছবি পেঁয়াজ চাষ পেয়ারা গাছের উপকারিতা পেয়ারার পোকা দমনপেয়ারা গাছের কলম পদ্ধতি বারি পেয়ারা ছাদে পেয়ারা চাষ পদ্ধতি আমের গাছে সার প্রয়োগ, থাই পেয়ারার চাষ ও পরিচর্যা, Greeniculture, Greeniculture

চারা গাছ থেকেঃ থাই পেয়ারা গাছ দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। এর পাতা এবং ফুল উভয়ই হালকা সুগন্ধি এবং আকর্ষণীয়। গাছগুলি ১২ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। সুতরাং, থাই পেয়ারা গাছের শিকড়ের বিকাশের জন্য আরও বেশ বড় পাত্রের দরকার এবং পর্যাপ্ত স্থান সরবরাহ করতে অন্তত ১২ ইঞ্চি একটি কনটেইনার যোগাড় করুন। রোপণ করার আগে, পাত্রে পর্যাপ্ত নিষ্কাশনযুক্ত মাটি তৈরি করুন, অতিরিক্ত পানি সহজে বের হয়ে যায় এমন পাত্রটি বেছে নিন। আপনার পাত্রটিতে মিশ্রিত কম্পোস্ট, বালি এবং মাটির সাথে একটি গুণমানের পটিং মিশ্রণ নিয়ে স্ব-পরাগামী ধরনের উদ্ভিদ রোপণ করুন। পরে গাছে পরিমিত পানি দিন কারণ এই গাছ আর্দ্রতা পছন্দ করে। রৌদ্রযুক্ত স্থানে পাত্রটি রাখুন। এমন একটি স্থানে রাখুন যাতে সূর্যের অন্তত ছয় ঘন্টা আলো পায়।

থাই পেয়ারা গাছের যত্ন

পানি সেচঃ গাছে নিয়মিত পানি দেয়া প্রয়োজন। অন্তত মাটি ২-৩ ইঞ্চি সমান ভিজা থাকতে হবে । মাটিতে আর্দ্রতার অভাবে ফুল এবং ফল অকালে ঝড়ে পড়তে পারে। জলবায়ু এটা আর্দ্র এবং শুষ্ক জলবায়ুতে রোপণ করা হয়। এটা উভয় ঋতুতে পাওয়া ফল। ২৯ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রা থাই পেয়ারার জন্য ভাল।

প্রুনিংঃ পছন্দসই যদি চারপাশে কোণ আকৃতির বজায় রাখতে চান তাহলে প্রুনিং করতে পারেন। এটি মূলত গাছটাকে একটা সুন্দর আকার দেয়ার জন্য ছাটাই করা কিন্তু ফল উত্পাদনের উপর প্রভাব ফেলবে না।

সারঃ গাছগুলিতে প্রতি এক মাসে একবার সারের প্রয়োজন। এবং গাছে যদি জৈব সার দেন তাহল্র আপনি একটি ভাল ফলাফল পেতে পারেন। নিয়মিত কম্পোস্ট দিলেও ভাল ফলন পেতে পারেন। সংগ্রহঃ যখন পেয়ারা সবুজ থেকে হালকা হলুদাভ হবে তখন সংগ্রহ করতে হয়৷ তবে গাছে পেয়ারা যেন বেশি না পাকে তা খেয়াল রাখতে হবে কারণ পোকা বা পাখি খেয়ে ফেলতে পারে।

ফলনঃ ভালোভাবে যত্ন নিলে একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে গ্রীষ্মকালে ৬০ থেকে ৭০ কেজি এবং হেমন্তকালে ৫০ থেকে ৬০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।

Tags

Top Post Ad

Bottom Post Ad

Ads Area